সৃষ্টি করুক শেষবারের মতো একটি কবিতার||

কবি : উমাপতি গোস্বামী

#সৃষ্টি_করুক_শেষবারের_মতো_একটি_কবিতার

#অনেকদিন পর আবার তোর সাথে আজ দেখা||
নতুন করে এইভাবে হঠাৎ দেখা হবে তা কখনোই ভাবিনি!!

#শেষবার তোকে দেখেছিলাম অতনুর বিয়ের রিসেপশনে—-||
সেদিন __ গা ভর্তি গয়না আর হলদে রঙা দামী শাড়ি দিয়ে মুড়ে রেখেছিলি নিজেকে!!

#মুখের লাবণ্য আগের চেয়ে অনেক বেশি ছিল_____
বড়লোকের সুসজ্জিত অট্টালিকায় তুই যে বড় সুখে আছিস তা তোর চেহারাতেই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া গিয়েছিল সেদিন!!

#ফাগুন বিকেলের অস্তগামী – লালরঙা সূর্যকে সাক্ষ্মী রেখে শেষবারের মতো আমার হাতের আঙুল ধরে হাঁটতে হাঁটতে কংসাবতীর নদীর বালির উপর যে পায়ের ছাপ রেখে গিয়েছিলি সেই দাগই আমার হৃদয়ে রচনা করেছিল সীমাহীন নিঃসঙ্গতা, যা আমার আজীবনের সাথী!!

#সব হারিয়েও যে বেঁচে থাকা যায় তা শিখেছিলাম ভুবন কাকার কাছ থেকে!!
তোর মনে আছে —কাকার সেই দরদি মনের মরমি গান; কি অপূর্ব গান গাইতো ভুবন কাকা!!

#নীরবালা’র সেই কথাখানি কষ্টমাখা হৃদয় নিয়ে ভুবন কাকা বড্ড ভালো গাইতো____
“দিন গেল রে, ডাক দিয়ে নে পারের খেয়া;
চুকিয়ে হিসেব মিটিয়ে দে তোর দেওয়া নেওয়া।”

#চোখগুলো ভিজে গেলেও, ঠোঁটে থাকতো মিষ্টি একটা হাসি!!
আমাদের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চোখ রেখে __ কাকা_ বারবার বলতো – তোরা কেও কখনো হারাস না যেন!!
বিচ্ছেদের মাঝে যে কষ্ট তা মৃত্যুর চেয়েও বড় নিদারুণ!!

#একলা মনে মাঝেমাঝে কতবার এসেছি এখানে, সৌন্দর্যের টান তো ছিলই কিন্তু তাঁর চেয়ে বেশি ছিল ভুবন কাকার ডিঙিতে চড়ে সেই গান আর সরল সত্য সুন্দর কথা শোনার সীমাহীন ইচ্ছে!!

#এতোদিনে সেই মানুষটাও চলে গিয়েছে বোধহয়!
গতবার বসন্ত পলাশের রঙ মেখে এখানে যখন এসেছিলাম তখনও দেখিনি, আর এবারও দেখতে পেলাম না, বয়সটাও তো নিছক কম ছিল না তাঁর!!

#তোর – আমার সমীকরণ সহজ ছিল যদিও কিন্তু যতদিন পার হয়েছে ধীরে ধীরে সেও জটিল রূপ নিয়েছে!!
কার দোষ কার গুন এসব হিসেব করে এই কয়েকটি মিনিট পার নাই বা করলাম!!

#তোকে এক টুকরো দেখতে পাবার মাঝে যে কতখানি তৃপ্তি তা কেবল এই মনটাই জানে!
ঈশ্বরও জানেন যদিও, তবুও দেখ উনি কেমন নির্দয় ভাবে এঁকে দিয়েছেন তোর আর আমার অন্তরের মাঝে একটা কষ্টের ছেদ চিহ্ন!!

#রাজনীতি করা তোর বাবার অহংবোধ আর সীমাহীন চতুরতা আমাকে শেষের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো সেদিন___!!
তুইও থাকলি না, প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিটাও চলে গেলো!

#একলা আকাশে অশুভ গ্রহের সাথে লড়াই করতে করতে কোনোরকমে টিকে গিয়েছিলাম সেদিন!!

#মা পাত্রীও দেখেছিলেন– রূপবতী ছিল শুনেছিলাম, কিন্তু চিরকুমার সভার _ সভ্য হতে চাওয়ার ইচ্ছে যার জীবনের একটা ব্রত; প্রজাপতির ইচ্ছেতেও সে যে আর কিছুতেই বাঁধা পড়ে না!!

#মা কে বলতাম_ চিন্তা করো না; ভগবান সকলের জন্য কোনো না কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছেন!
বোঝাতাম_ আমাকে ঘিরে ওনার পরিকল্পনা খুব একটা সুন্দর না হলেও, ভীষণ রকম মন্দও নয় গো মা!!

#একদিন সকলের অগোচরে __ দিন শেষের শেষ খেয়ায় ঝিরিঝিরি শ্রাবণ-সন্ধ্যার বুকে মাথা রেখে আমার মা’ও চলে গেলেন!!
সেদিন থেকে এতো বড় জগতে আমি একা ___ সম্পূর্ণ একা!!

#এধার ওধার ঘুরে ঘুরে সময় কাটায় আর মাঝেমাঝে তোর স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরার আশা নিয়ে চলে আসি কংসাবতীর তীরে প্রাকৃতিক আর কৃত্রিম সৌন্দর্যে মোড়া এই মুকুটমনিপুরে!!
এমন বসন্ত দিনে এখানে বসে কত যে কবিতার জন্ম দিয়েছি তা হয়তো নিজেরই হিসেব নেই __ জানিস!!

#কি রে শুনেই যাবি, কিছুই কি বলার নেই তোর!?
পাগলি _ !! তুই কিছু না বললেও তোর দীর্ঘশ্বাসের শব্দে যেন অনেক কথা বলে যায় আমার কানে কানে!!

#ভয় নেই __ তোকে লোকনিন্দায় পড়তে দেবো না কখনোই !!
ওধারের শিবমন্দির থেকে তোর বর আসার আগেই, আমি হারিয়ে যাবো এখানের ভিঁড়ে!!
মন চাইলে তুই’ও আর খুঁজে পাবি না আমায়!!

#দেখ সেই দিনের মতোই আজ আবারও বেলাশেষের অস্তরাগের সূর্যটা কি সুন্দর রক্তিম আভা নিয়ে ডুবে যাচ্ছে পশ্চিমের নীল আকাশে; হয়তো ঠিক ওভাবেই আমিও ___________!!

#এই ___!! একবার চেয়ে দেখ না ওদিকে___!!
আজ বড় সাধ জাগে ___!!
দুজনার দৃষ্টি একজায়গায় মিলিত হয়ে সৃষ্টি করুক শেষবারের মতো একটি কবিতার__ শুধু একটিমাত্র কবিতার !! যার প্রত্যেকটি শব্দের মাঝে লুকিয়ে থাকবে এই জন্মের সীমাহীন এক —‐—- তৃপ্তি!!
🪴🪴🪴🪴🪴🪴🌲🌲🌲🪴🪴🪴🪴🪴🪴🪴