খিদে পেটে পোড়া ঘোড়া

কবি :

খিদে পেটে ঘোড়া পোড়া
শ্যামাপ্রসাদ সাঁতরা (অপু)

কড়ি দিয়ে কেনা
গিরি তিলক এলা মাটি
প্রলেপ স্তরে গাদ অবিরাম
আগুনে পুড়ে হবে পোড়ামাটি ।
এই হলো আমার বাপ ঠাকুরদার
পোড়ো বাড়ির ভিটে,
জন্মবধি অভাব মেটায় কাদা মাটি ঘেঁটে।

বাবু-বিবি বলে হাড়ি বিকিস বারি বিকিস
খোলা খাবরি ঘট মালসা সরা-
হাড় খাটিয়ে কুমোর বলেই
বিকিস হাতি ঘোড়া।
কুমোরপাড়ায় দেখ শুধু শিল্প ভাবের খাঁড়া
সৃষ্টিতে জীবন মগ্ন এদের-
কানকাটা আর নেড়া।
বদনাম সুনাম দেশের মানুষ শিল্প খাবে না
নাক উঁচিয়ে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারটি আনা।
পান্তা ভাতের নুন আমানি
খেতাম সকাল বেলা –
সারাটি দিন রোদ-ছায়ায়
ঘোড়া শুকানোর পালা ।
গরম ভাতের বাস ছড়ায়
পোড়ামাটির হাড়িতে
মাটি খাঁটি এই কুটিরে
বাপের দেওয়া চটে।

তোমরা খেয়ো সাত পদ দিয়ে
সরিষা ইলিশ মাছের ডিম বড়া,
খিদের জ্বালায় পেট পুরে খায়
পোড়ামাটির ঘোড়া।
ছেলে পুলে বায়না ধরে মকর পরবে
নতুন জামা গায়ের চাদর কিনবে বাজারে,
অসুখ বিসুখ হলে মা-বাবার ভাবনা কত শত
কষ্ট দেখে দাদু ঠাকুমা মুখ খুলে না তো।
নিত্য শহর আধুনা বহর চারিদিকে
ব্যস্ত অঙ্গ সাজে প্রেমাঞ্জন চোখে ।
তোমরা থাকো মাস বছর রসে
খরার বছর পেটে ভরেছে
কাঁচা তালের দুটি সাঁসে।
বিকেল হলে গোধূলি ধূলে
পাখিরা সব বাসায় ফেরে,
প্রদীপ জ্বলে সন্ধ্যা হলে
আমার সুখের শিল্পী ঘরে।
শ্বাস মেটেনি আশ মেটেনি
তবু রঙীন হল দুর্গা মেলা
ভাটির ধোঁয়ায় মুখ ঢেখেছে
পাড়ার মাঝে মনসা তলা।
যাত্রাপালার আসর হলে টাঙাই সামিয়ানা
আমার গ্রামের পাড়ায় পাড়ায়
পেটে জোটেনা দানা।
আসবে কবে আবার ভবে স্বপ্ন জাগার দিন
হাঁক দিয়ে যায় আটপৌরে
জাগতে রহো নবীন ।
গাছ গাছালির ভগ্ন জীবন নধর আগাগোড়া
এই জীবনে খিদে পেলে খেয়ে যাব
পোড়া মাটির ঘোড়া।

Title – “Burning horses on an empty stomach”